গতকাল ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার হইতে শুরু হইয়াছে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ। এই উপলক্ষে প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে সেবার মান বৃদ্ধির চেষ্টা চলিতেছে। পাসপোর্ট করিতে গিয়া একসময় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করিয়াছিল। পদে পদে বৃদ্ধি পাইয়াছিল দালালদের দৌরাত্ম্য। তাহাদের খপ্পরে পড়িয়া ও অতিরিক্ত অর্থব্যয় করিয়াও অনেকে যথাসময়ে পাসপোর্ট করিতে পারিতেন না। তবে বর্তমানে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ কিছুটা হইলেও লাঘব হইয়াছে। বিশেষ করিয়া রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের চিত্র তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। কিন্তু ঢাকার বাহিরে পাসপোর্ট অফিসগুলিতে ধাপে ধাপে পাতানো ফাঁদের অবসান হয় নাই। রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে কয়েকদিন ঘুরাঘুরি করিয়াও আবেদন ফরমই জমা দিতে পারিতেছে না কেহ কেহ। চট্টগ্রামে বিভাগীয় ও আঞ্চলিক নামে দুইটি পাসপোর্ট অফিস থাকিলেও দালাল ছাড়া ফরম জমা দিতে গেলে নানা ছলচাতুরিতে তাহা বাতিল করা হইতেছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে বাড়িতেছে হয়রানি। খুলনার বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসেও বিরাজ করিতেছে একই অবস্থা। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতির অজুহাত দেখাইয়া হয়রানি করা হইতেছে পাসপোর্ট গ্রহীতাকে। কেবল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহের দিনগুলিতে নহে, সারা বত্সরই যাহাতে পাসপোর্ট অফিসগুলি অনিয়ম ও হয়রানিমুক্ত থাকে, সেই ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা নিতে হইবে।
কয়েকটি পর্যায়ে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের দুর্ভোগ পাইতে দেখা যায়। প্রথমত, ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দিতে গিয়াই কেহ কেহ ভোগান্তিতে পড়েন। তবে যেসব ব্যাংকে অনলাইনে টাকা জমা নিবার ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই দুর্ভোগ তুলনামূলক কম। দ্বিতীয়ত, ফরম জমা দিতে গিয়া অনেকে দালালের খপ্পরে পড়িয়া নাজেহাল হন। আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে এই সমস্যা না থাকিলেও বাহিরে দালালের দৌরাত্ম্য ঠিকই আছে। তৃতীয়ত, টুকিটাকি ভুল-ভ্রান্তির কারণেও অনেক সময় হয়রানিতে পড়িতে হয়। চতুর্থত, এসবি রিপোর্ট তথা পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজ বিলম্ব হওয়ায় অনেকে কাঙ্ক্ষিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পান না। এক্ষেত্রে প্রায়শ দিতে হয় বাড়তি অর্থ। তবে সকলের স্মার্ট কার্ড হইয়া গেলে এই পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি আরও সহজ হইতে পারে। সাধারণত হজ মৌসুমে ও কোনো দেশে লোকবল নেওয়ার ঘোষণা আসিলে পাসপোর্ট করিবার চাহিদা বাড়ে। এই সময়েও যাহারা অনলাইনে আবেদন করেন, তাহারা সহজেই পাসপোর্ট পাইয়া থাকেন বলিয়া জানা যায়। অর্থাত্ পাসপোর্ট তৈরিতে অনলাইন পদ্ধতি পুরাপুরি কার্যকর হইলে এইক্ষেত্রে জনগণের ভোগান্তি বহুলাংশে কমিয়া যাইবে। আশার খবর হইল, বিশ্বের ১১৮টি দেশের ন্যায় জার্মানির প্রযুক্তির সাহায্যে জিটুজির মাধ্যমে শীঘ্রই বাংলাদেশেও চালু হইতে যাইতেছে ই-পাসপোর্ট। ইহাতে এই দুর্ভোগ আর থাকিবে বলিয়া মনে হয় না। ইতোমধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) মালিক হইয়াছেন। পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়িবে, তত হয়রানি ও অনিয়ম দূর হইবে বলিয়া আশা করা যায়। একই সঙ্গে ৭১টি পাসপোর্ট অফিসে আনুপাতিক হারে লোকবল ও সরঞ্জামাদি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply